তাসরিফ খান: সরকারের চাপ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাহসী স্ট্যাটাস
- Update Time : ০২:৪৫:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪
- / 60
তরুণ সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান তার ফেসবুক পোস্টে প্রকাশ করেছেন কিভাবে সরকারের চাপ, হুমকি এবং তার ব্যান্ডের সদস্য শান্তের নির্যাতনের মুখে তিনি সাহসিকতার সাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।
তরুণ সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান তার ফেসবুক পোস্টে প্রকাশ করেছেন কিভাবে সরকারের চাপ, হুমকি এবং তার ব্যান্ডের সদস্য শান্তের নির্যাতন করা হয়েছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিল্পীদের ভূমিকা
বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ জনগণের সাথে সংস্কৃতিকর্মীরাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তরুণ সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান এই আন্দোলনে ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ গানটির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান। কিন্তু তার এই সাহসী পদক্ষেপ তাকে সরকারি চাপ ও হুমকির মুখে ফেলেছে। সম্প্রতি, তাসরিফ তার ফেসবুক পোস্টে এমনই একটি গুরুতর অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন, যা তার সাহসিকতা এবং সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের একটি উন্মোচনমূলক চিত্র তুলে ধরে।
সরকারি চাপের সম্মুখীন
তাসরিফ খান তার পোস্টে জানিয়েছেন, আন্দোলনের সমর্থনে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট ও কবিতা প্রকাশ করার পর ৫ জুলাই থেকে তাকে বাসার বাইরে থাকতে হয়েছে। ২৩ জুলাই রাত ১টার দিকে, একজন সিনিয়র ইনফ্লুয়েন্সার তাকে বাসার সামনে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেখানে, সরকারের পক্ষ থেকে আগত ছয়-সাতজনের একটি দল তাকে একটি ভিডিও বানানোর জন্য চাপ দেয়। তারা তাসরিফকে এক লাখ টাকা তিন টা বান্ডিল প্রদান করে এবং বলেন, ভিডিওটি প্রধানমন্ত্রী দেখবেন। তাদের দাবি ছিল, সরকারকে সমর্থন জানানো এই সুযোগটি তাসরিফের জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ।
মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন
তাসরিফ যখন ভিডিওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন, তখন তার ব্যান্ডের ড্রামার শান্তের কাছ থেকে একটি ফোন কল আসে। শান্ত কাঁদতে কাঁদতে জানায়, পুলিশ এবং সিভিল ড্রেসের লোকজন তার উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। শান্তের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি শুনে তাসরিফ অবরুদ্ধ অনুভব করেন। সেই মুহূর্তে, তার মাথায় আসে যে, হয়তো এই নির্যাতন তার ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য, কিংবা শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে, তিনি চাপের মুখে পড়েন এবং ভিডিও বানানোর জন্য তাদের চাপের মুখে ঝুঁকি না নিয়ে, সমস্যার সমাধান খোঁজেন।
অস্বীকৃতির সাহসিকতা
তাসরিফ জানিয়েছেন যে, তিনি ওই চাপের সম্মুখীন হওয়ার পর টাকা ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেননি এবং ভিডিও বানানোর প্রস্তাবে সম্মতি দেননি। তিনি তার ম্যানেজারকে তিন লাখ টাকা প্রদান করে বাসা ছেড়ে চলে যান, কারণ তিনি ভীত ছিলেন যে, তাকে জোর করে ভিডিও বানানো হতে পারে। তার পোস্টে, তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেননি এবং টাকার প্রলোভনে বিক্রি হননি।
বিশ্বাস ও প্রতিহিংসার অবসান
তাসরিফ তার পোস্টের শেষে স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি কোন প্রতিহিংসা পোষণ করতে চান না। তিনি সেই ইনফ্লুয়েন্সারের নাম প্রকাশ করতে চাননি, কারণ তার পরিবারের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি চান যে, ওই ব্যক্তি তার ভুল বুঝে সংশোধিত হোন এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন। তাসরিফের এই মনোভাব আমাদের শেখায় যে, প্রতিহিংসার বদলে মানুষের ভুল বুঝে সঠিক পথে আসা উচিত।
সাহসিকতার শিক্ষা
তাসরিফের কাহিনী আমাদের প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক চাপ ও হুমকির মুখেও সৎভাবে অবস্থান নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তার সাহস ও সততার মাধ্যমে, তিনি আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে একজন শিল্পী তার আদর্শ রক্ষায় দৃঢ় থাকতে পারে। তার এই পদক্ষেপ আমাদের সমাজে সৎভাবে কাজ করার প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে এবং সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে সাহসিকভাবে দাঁড়ানোর গুরুত্ব প্রমাণ করবে।