Dhaka ০৮:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ব্যাংকিং সংকটের কারণ: বাড়িতে টাকা রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি

  • Update Time : ১১:৫০:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪
  • / 73

বাংলাদেশে সম্প্রতি বাসাবাড়িতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে, যা ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি বাসাবাড়িতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে, যা ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

বাসাবাড়িতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও চ্যালেঞ্জ

১৮ আগস্ট ২০২৪ – বাংলাদেশে সম্প্রতি বাসাবাড়িতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে, যা ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। গত ছয় মাসে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এতে বাসাবাড়িতে সিন্দুক, লকার ও আলমারি কেনার সংখ্যাও বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুনে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা পৌঁছেছে, যা গত ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ৪৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা বেশি। এই প্রবণতা এবং পরিসংখ্যান ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের ইঙ্গিত দেয়।

মূল কারণগুলো

বিশেষজ্ঞরা জানান, টাকা বাড়িতে রাখার প্রবণতার পিছনে তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে:

১. মূলোধারী মূল্যস্ফীতি: চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে, ফলে অধিক টাকা হাতে রাখতে হচ্ছে।

২. দুর্নীতি ও নিরাপত্তাহীনতা: দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ব্যাংকে না রাখার প্রবণতা বেড়েছে, বিশেষ করে সাবেক সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর।

৩. ব্যাংকিং সিস্টেমে আস্থাহীনতা: ব্যাংকে টাকা জমা থাকলে তা সময়মতো ফেরত পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “মানুষের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকার কারণে তারা বাসায় সিন্দুকে টাকা রাখার প্রবণতা দেখাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, সিন্দুকে টাকা রাখার প্রবণতা কমবে।”

বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা জানান, অনেকেই অবৈধ টাকা ব্যাংকে রাখতে চাইছেন না, কারণ এতে টাকা হিসাবের আওতায় আসে। ব্যাংক খাতের সংকট নিরসনে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সিন্দুকের চাহিদা বাড়ছে

বংশালের সিন্দুক ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২০ বছরে সিন্দুকের বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ, এবং ডিজিটাল সিন্দুকের চাহিদাও বাড়ছে। শহরাঞ্চলে সিন্দুকের বড় বড় দোকান গড়ে উঠছে, যা টাকার গোপন রাখার প্রবণতার অন্যতম চিহ্ন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকা

দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, “সকল টাকা অবৈধ নয়, তবে আমরা এর উৎস জানতে চেষ্টা করছি। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ পরিস্থিতি সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট মোকাবেলা এবং অর্থনীতির স্বাভাবিকতা ফেরানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ট্যাগ :

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

ব্যাংকিং সংকটের কারণ: বাড়িতে টাকা রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি

Update Time : ১১:৫০:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪
বাংলাদেশে সম্প্রতি বাসাবাড়িতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে, যা ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

বাসাবাড়িতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও চ্যালেঞ্জ

১৮ আগস্ট ২০২৪ – বাংলাদেশে সম্প্রতি বাসাবাড়িতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে, যা ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। গত ছয় মাসে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এতে বাসাবাড়িতে সিন্দুক, লকার ও আলমারি কেনার সংখ্যাও বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুনে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা পৌঁছেছে, যা গত ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ৪৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা বেশি। এই প্রবণতা এবং পরিসংখ্যান ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের ইঙ্গিত দেয়।

মূল কারণগুলো

বিশেষজ্ঞরা জানান, টাকা বাড়িতে রাখার প্রবণতার পিছনে তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে:

১. মূলোধারী মূল্যস্ফীতি: চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে, ফলে অধিক টাকা হাতে রাখতে হচ্ছে।

২. দুর্নীতি ও নিরাপত্তাহীনতা: দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ব্যাংকে না রাখার প্রবণতা বেড়েছে, বিশেষ করে সাবেক সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর।

৩. ব্যাংকিং সিস্টেমে আস্থাহীনতা: ব্যাংকে টাকা জমা থাকলে তা সময়মতো ফেরত পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “মানুষের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকার কারণে তারা বাসায় সিন্দুকে টাকা রাখার প্রবণতা দেখাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, সিন্দুকে টাকা রাখার প্রবণতা কমবে।”

বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা জানান, অনেকেই অবৈধ টাকা ব্যাংকে রাখতে চাইছেন না, কারণ এতে টাকা হিসাবের আওতায় আসে। ব্যাংক খাতের সংকট নিরসনে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সিন্দুকের চাহিদা বাড়ছে

বংশালের সিন্দুক ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২০ বছরে সিন্দুকের বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ, এবং ডিজিটাল সিন্দুকের চাহিদাও বাড়ছে। শহরাঞ্চলে সিন্দুকের বড় বড় দোকান গড়ে উঠছে, যা টাকার গোপন রাখার প্রবণতার অন্যতম চিহ্ন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকা

দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, “সকল টাকা অবৈধ নয়, তবে আমরা এর উৎস জানতে চেষ্টা করছি। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ পরিস্থিতি সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট মোকাবেলা এবং অর্থনীতির স্বাভাবিকতা ফেরানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।