তাজুল ইসলামের সহকারী কামাল হোসেনের ৬০০ কোটি টাকার সম্পদ
- Update Time : ১২:৪৫:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / 87
তাজুল ইসলামের সহকারী কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ৬০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. কামাল হোসেন, যিনি একসময় কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের একটি দালালের সহকারী ছিলেন, বর্তমানে শত শত কোটি টাকার মালিক হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সান্নিধ্যে এসে কামালের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে এবং তিনি এখন বিপুল সম্পদের মালিক।
অবৈধ সম্পদের পাহাড়
২০১৮ সালে তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর কামালকে মন্ত্রীর উন্নয়ন সমন্বয়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই পদে থেকেই কামাল টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সালিশ বৈঠক, ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম এবং থানায় তদবিরসহ বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। কামাল কুমিল্লা এলজিইডি অফিসের টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদারি এবং মন্ত্রীর কমিশন বাণিজ্যসহ নানা কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর দুদক কুমিল্লার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা একটি মামলা করেন।
দুদকের অনুসন্ধান
দুদকের অনুসন্ধানে কামাল হোসেনের নামে ১৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তাঁর পারিবারিক ব্যয়, পরিশোধিত কর, অপরিশোধিত দায়সহ মোট ১৭ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৬ টাকার নিট সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার ৮০ টাকার বৈধ উৎস পাওয়া গেছে, তবে ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৬ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত সম্পদ এবং অভিযোগ
স্থানীয়রা দাবি করেছেন, কুমিল্লা শহরেই কামালের ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তাঁর কুমিল্লার হাউজিং এস্টেটে একাধিক বাড়ি, কান্দিরপাড় এলাকায় বিগ বাজার সুপার মার্কেট, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও প্লট এবং কৃষি ও অকৃষি জমির তথ্য বের করা যায়নি। মোট সম্পদের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয়রা কামালের এসব অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
দুদকের তদন্ত ও আত্মগোপন
দুদক কুমিল্লার উপপরিচালক ফজলুর রহমান জানান, কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং তদন্ত অব্যাহত আছে। অভিযুক্ত কামাল হোসেন আত্মগোপনে চলে গেছেন এবং তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। জানা যায়, ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর তিনি দুবাই পালিয়ে গেছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ
কামাল হোসেন শুধু এলজিইডি নয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) কুমিল্লা শাখার নিয়ন্ত্রণেও ছিলেন। তাজুল ইসলাম মন্ত্রী থাকাকালে কুমিল্লায় ডিপিএইচইয়ের হাজার কোটি টাকার কাজ সম্পাদিত হয়েছে। প্রতিটি কাজের ঠিকাদার নিয়োগ দিতেন কামাল এবং প্রতিটি কাজ থেকে ১০% কমিশন নিতেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালের ২৬ জুলাই কার্যাদেশ দেওয়া একটি প্রকল্প মাত্র চার দিনে সম্পন্ন হয় এবং চূড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়।
নিরপেক্ষ মূল্যায়ন
কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও তদন্ত চলমান থাকলেও, স্থানীয়দের দাবি এই দুর্নীতির অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। জাতীয় স্বার্থে এসব অভিযোগের সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন যাতে দেশব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়।