Dhaka ০৮:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএনপি কি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?

  • Update Time : ০৮:৩২:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 11

তারেক রহমান - সংগৃহীত ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কুমিল্লায় এক কর্মশালায় জনগণের জন্য জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় গেলে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে। সম্প্রতি কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রতিশ্রুতি দেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেছেন, বিএনপি দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে একটি জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠন করবে। তবে, এটি কি বাস্তবে সম্ভব?

৩১ দফা প্রস্তাব: কী রয়েছে এতে?

তারেক রহমান বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তাবকে দেশের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের রূপরেখা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু বিএনপির দলীয় কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না; জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।” এই ৩১ দফার মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন।

প্রস্তাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারেক রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্তর থেকেই নৈতিক শিক্ষা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা হবে।

বিএনপির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

তারেক রহমানের বক্তব্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি স্পষ্ট দিকচিত্র উঠে এসেছে। তবে, প্রশ্ন থেকে যায়—এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে বিএনপি কতটা কার্যকর হতে পারবে? দলটি গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এর মধ্যে তারা বিভিন্ন সময় আন্দোলন ও সংগ্রাম করলেও কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারেনি।

বিগত সময়ে বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দলীয় দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে দলটি জনগণের আস্থা অনেকটাই হারিয়েছে।

স্বৈরাচারের অবসান: কতটা সম্ভব?

তারেক রহমান দাবি করেছেন যে, দেশে “স্বৈরাচারী সরকার” ক্ষমতায় রয়েছে, যারা শিক্ষা ও প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, “স্বৈরাচারীরা দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে।” তবে স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা কি সহজ হবে? বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিএনপিকে রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে শক্তিশালী হতে হবে।

জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার

তারেক রহমান দলের কর্মীদের জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কাজ করা যাবে না।” এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। জনগণের আস্থা ফিরে পেতে বিএনপিকে দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ, এবং জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রম প্রদর্শন করতে হবে।

বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুরুত্ব

বিএনপি ৩১ দফা প্রস্তাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, এবং দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে। তবে এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য দলকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হবে, যা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

সতর্কবার্তা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন পেছানো যাবে না। যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, অবধারিতভাবে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।” তবে নির্বাচনে জয়লাভ করাই শেষ কথা নয়; দলীয় সদস্যদের সততা বজায় রাখা এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করাই হবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।

বিএনপি কি সফল হবে?

তারেক রহমানের বক্তব্য ও পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ ঐক্য, এবং জনগণের আস্থা।

সর্বশেষে প্রশ্ন থেকে যায়: বিএনপি কি সত্যিই জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?
এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করছে। তবে এটি নিশ্চিত যে, জনগণের আস্থা অর্জন এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দলটিকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

বিএনপি কি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?

Update Time : ০৮:৩২:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কুমিল্লায় এক কর্মশালায় জনগণের জন্য জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় গেলে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে। সম্প্রতি কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রতিশ্রুতি দেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেছেন, বিএনপি দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে একটি জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠন করবে। তবে, এটি কি বাস্তবে সম্ভব?

৩১ দফা প্রস্তাব: কী রয়েছে এতে?

তারেক রহমান বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তাবকে দেশের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের রূপরেখা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু বিএনপির দলীয় কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না; জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।” এই ৩১ দফার মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন।

প্রস্তাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারেক রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্তর থেকেই নৈতিক শিক্ষা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা হবে।

বিএনপির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

তারেক রহমানের বক্তব্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি স্পষ্ট দিকচিত্র উঠে এসেছে। তবে, প্রশ্ন থেকে যায়—এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে বিএনপি কতটা কার্যকর হতে পারবে? দলটি গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এর মধ্যে তারা বিভিন্ন সময় আন্দোলন ও সংগ্রাম করলেও কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারেনি।

বিগত সময়ে বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দলীয় দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে দলটি জনগণের আস্থা অনেকটাই হারিয়েছে।

স্বৈরাচারের অবসান: কতটা সম্ভব?

তারেক রহমান দাবি করেছেন যে, দেশে “স্বৈরাচারী সরকার” ক্ষমতায় রয়েছে, যারা শিক্ষা ও প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, “স্বৈরাচারীরা দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে।” তবে স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা কি সহজ হবে? বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিএনপিকে রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে শক্তিশালী হতে হবে।

জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার

তারেক রহমান দলের কর্মীদের জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কাজ করা যাবে না।” এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। জনগণের আস্থা ফিরে পেতে বিএনপিকে দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ, এবং জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রম প্রদর্শন করতে হবে।

বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুরুত্ব

বিএনপি ৩১ দফা প্রস্তাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, এবং দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে। তবে এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য দলকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হবে, যা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

সতর্কবার্তা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন পেছানো যাবে না। যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, অবধারিতভাবে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।” তবে নির্বাচনে জয়লাভ করাই শেষ কথা নয়; দলীয় সদস্যদের সততা বজায় রাখা এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করাই হবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।

বিএনপি কি সফল হবে?

তারেক রহমানের বক্তব্য ও পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ ঐক্য, এবং জনগণের আস্থা।

সর্বশেষে প্রশ্ন থেকে যায়: বিএনপি কি সত্যিই জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?
এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করছে। তবে এটি নিশ্চিত যে, জনগণের আস্থা অর্জন এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দলটিকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।