Dhaka ০৮:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পাট শিল্প বাঁচাতে উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ: তারা কি পারবেন?

  • Update Time : ০৯:২২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 10

পাট শিল্প

পাট শিল্পকে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ: উদ্যোক্তারা কি পারবে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে?

পাট একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল। তবে বর্তমানে এই শিল্প নানা সংকটে জর্জরিত। পাটের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা বাড়াতে শৈল্পিক নয়, বরং ব্যবহারিক উপযোগিতা এবং অর্থনৈতিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাট শিল্পের বর্তমান অবস্থা

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, পাট শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এর ব্যবহারিক স্কেল-আপ করা জরুরি। শুধুমাত্র শৈল্পিক মূল্য দিয়ে পাটকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়। উদ্যোক্তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় এই শিল্পের জন্য একটি স্থায়ী ভিত্তি তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পও একসময় এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ছিল। উদ্যোক্তারা যখন এই খাতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হন, তখনই ব্যাংক অর্থায়ন শুরু হয়। একই পথে পাট শিল্পকেও এগোতে হবে।

পাট শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ

উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন, পাট শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার পাশে আছে। তবে উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, “আপনারা উদ্যোগ নিন, সরকার সাথে আছে। পাটের সেই জায়গা তৈরি করুন, তারপর ব্যাংক অর্থায়ন করতে এগিয়ে আসবে।”

অনিয়ন্ত্রিত মজুদদারি বন্ধ করাও পাট শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কৃষক যাতে পাটের সঠিক মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার।

পাট থেকে আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা

বস্ত্র ও পাট সচিব আ. রউফ বলেছেন, বর্তমানে পাট থেকে এক বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় হয়। প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন করে এই আয় তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। এটি অর্জনের জন্য পাট শিল্পে গবেষণা এবং উন্নয়ন বাড়াতে হবে।

উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব এবং প্রত্যাশা

পাট শিল্পের উদ্যোক্তারা নিজেরাই এই শিল্পের টিকে থাকার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, “পাটের জন্য দেশ স্বাধীন করলাম আর সেই পাটকে ভুলে গেছি আমরা।”

পাট শিল্পের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতো সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি করেছেন উদ্যোক্তা রাশেদুল করিম মুন্না। পাট খাতে ক্যামিক্যাল আমদানির জন্য বন্ড সুবিধা প্রদান করলে এই খাত আরও গতিশীল হবে।

তারা কি পারবেন?

পাট শিল্পের পুনর্জাগরণ সহজ কাজ নয়। উদ্যোক্তাদের নতুন করে ভাবতে হবে এবং নিজেদের প্রচেষ্টায় এই শিল্পের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। যদিও সরকার এই শিল্পের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে, তবে উদ্যোগ এবং নেতৃত্ব আসতে হবে উদ্যোক্তাদের দিক থেকেই।

প্রশ্ন থেকে যায়: পাট শিল্পের উদ্যোক্তারা কি নিজেদের দায়িত্ব পালন করে এই শিল্পকে বাঁচাতে পারবেন? নাকি পাট আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের আরও একটি পরিত্যক্ত অধ্যায় হয়ে থাকবে?

আপনার মতামত দিন:

এই বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের জানাতে মন্তব্য করুন।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

পাট শিল্প বাঁচাতে উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ: তারা কি পারবেন?

Update Time : ০৯:২২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

পাট শিল্পকে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ: উদ্যোক্তারা কি পারবে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে?

পাট একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল। তবে বর্তমানে এই শিল্প নানা সংকটে জর্জরিত। পাটের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা বাড়াতে শৈল্পিক নয়, বরং ব্যবহারিক উপযোগিতা এবং অর্থনৈতিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাট শিল্পের বর্তমান অবস্থা

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, পাট শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এর ব্যবহারিক স্কেল-আপ করা জরুরি। শুধুমাত্র শৈল্পিক মূল্য দিয়ে পাটকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়। উদ্যোক্তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় এই শিল্পের জন্য একটি স্থায়ী ভিত্তি তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পও একসময় এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ছিল। উদ্যোক্তারা যখন এই খাতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হন, তখনই ব্যাংক অর্থায়ন শুরু হয়। একই পথে পাট শিল্পকেও এগোতে হবে।

পাট শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ

উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন, পাট শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার পাশে আছে। তবে উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, “আপনারা উদ্যোগ নিন, সরকার সাথে আছে। পাটের সেই জায়গা তৈরি করুন, তারপর ব্যাংক অর্থায়ন করতে এগিয়ে আসবে।”

অনিয়ন্ত্রিত মজুদদারি বন্ধ করাও পাট শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কৃষক যাতে পাটের সঠিক মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার।

পাট থেকে আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা

বস্ত্র ও পাট সচিব আ. রউফ বলেছেন, বর্তমানে পাট থেকে এক বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় হয়। প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন করে এই আয় তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। এটি অর্জনের জন্য পাট শিল্পে গবেষণা এবং উন্নয়ন বাড়াতে হবে।

উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব এবং প্রত্যাশা

পাট শিল্পের উদ্যোক্তারা নিজেরাই এই শিল্পের টিকে থাকার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, “পাটের জন্য দেশ স্বাধীন করলাম আর সেই পাটকে ভুলে গেছি আমরা।”

পাট শিল্পের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতো সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি করেছেন উদ্যোক্তা রাশেদুল করিম মুন্না। পাট খাতে ক্যামিক্যাল আমদানির জন্য বন্ড সুবিধা প্রদান করলে এই খাত আরও গতিশীল হবে।

তারা কি পারবেন?

পাট শিল্পের পুনর্জাগরণ সহজ কাজ নয়। উদ্যোক্তাদের নতুন করে ভাবতে হবে এবং নিজেদের প্রচেষ্টায় এই শিল্পের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। যদিও সরকার এই শিল্পের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে, তবে উদ্যোগ এবং নেতৃত্ব আসতে হবে উদ্যোক্তাদের দিক থেকেই।

প্রশ্ন থেকে যায়: পাট শিল্পের উদ্যোক্তারা কি নিজেদের দায়িত্ব পালন করে এই শিল্পকে বাঁচাতে পারবেন? নাকি পাট আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের আরও একটি পরিত্যক্ত অধ্যায় হয়ে থাকবে?

আপনার মতামত দিন:

এই বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের জানাতে মন্তব্য করুন।