Dhaka ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিচ্ছে

  • Update Time : ০৫:০০:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
  • / 89

bangladesh-bank-islamic-bank-board-dissolution

বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিচ্ছে

বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বুধবার, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, ইসলামী ব্যাংকের জন্য একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “যারা ব্যাংকটির অর্থ আত্মসাৎ করে চলে গেছেন, তাদের নামেও যদি কোনো শেয়ারহোল্ডিং থাকে, আমরা তা টেকওভার করব। এস আলম গ্রুপের সব শেয়ার আমরা আইনগতভাবে টেকওভার করব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যদি এস আলম গ্রুপ টাকা ফেরত দেয়, তবে তাদের শেয়ার ফেরত দেওয়া হতে পারে, তবে তাঁর মতে, তাদের এমন উদ্দেশ্য নেই এবং তারা যা লুট করেছে তা ইতোমধ্যেই লুটে ফেলেছে।

সরকার পতনের পর থেকেই ইসলামী ব্যাংককে ‘এস আলম ও পটিয়া মুক্ত’ করার আন্দোলন শুরু হয়েছে। কর্মকর্তারা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ঋণ বিতরণে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেছেন। এ পরিস্থিতিতে এস আলমপন্থী কর্মকর্তারা ব্যাংকটির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছিলেন না।

এর অংশ হিসেবে, গত সোমবার ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় আট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকৃতদের মধ্যে একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) এবং পাঁচজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। অন্যান্য বরখাস্তকৃতরা ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ছিলেন। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সরকারের পতনের পর কর্মকর্তাদের চাপের মুখে।

ব্যানক সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিন, যিনি সাইফুল আলমের একান্ত সচিব ছিলেন। এছাড়া, ঋণ বিতরণ ও মানবসম্পদ বিষয়ক দায়িত্বে থাকা মিফতাহ উদ্দিনও বরখাস্ত হয়েছেন।

অন্য বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা হলেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবীবুল্লাহ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাব্বির, কাজী মো. রেজাউল করিম এবং মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। ব্যাংকের প্রধান অর্থ পাচার প্রতিরোধ কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) তাহের আহমেদ চৌধুরী এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল মো. নজরুল ইসলামও বরখাস্ত হয়েছেন।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। এর মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। সরকার পতনের পর এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে অর্থ সরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদিনেই ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়, তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা তা আটকে দেন। অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেছিল গোল্ডেন স্টার ও টপ টেন ট্রেডিং হাউজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ব্যাংকিং সেক্টরের অস্থিরতা কমাতে এবং অর্থনীতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ট্যাগ :

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিচ্ছে

Update Time : ০৫:০০:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিচ্ছে

বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বুধবার, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, ইসলামী ব্যাংকের জন্য একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “যারা ব্যাংকটির অর্থ আত্মসাৎ করে চলে গেছেন, তাদের নামেও যদি কোনো শেয়ারহোল্ডিং থাকে, আমরা তা টেকওভার করব। এস আলম গ্রুপের সব শেয়ার আমরা আইনগতভাবে টেকওভার করব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যদি এস আলম গ্রুপ টাকা ফেরত দেয়, তবে তাদের শেয়ার ফেরত দেওয়া হতে পারে, তবে তাঁর মতে, তাদের এমন উদ্দেশ্য নেই এবং তারা যা লুট করেছে তা ইতোমধ্যেই লুটে ফেলেছে।

সরকার পতনের পর থেকেই ইসলামী ব্যাংককে ‘এস আলম ও পটিয়া মুক্ত’ করার আন্দোলন শুরু হয়েছে। কর্মকর্তারা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ঋণ বিতরণে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেছেন। এ পরিস্থিতিতে এস আলমপন্থী কর্মকর্তারা ব্যাংকটির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছিলেন না।

এর অংশ হিসেবে, গত সোমবার ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় আট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকৃতদের মধ্যে একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) এবং পাঁচজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। অন্যান্য বরখাস্তকৃতরা ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ছিলেন। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সরকারের পতনের পর কর্মকর্তাদের চাপের মুখে।

ব্যানক সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিন, যিনি সাইফুল আলমের একান্ত সচিব ছিলেন। এছাড়া, ঋণ বিতরণ ও মানবসম্পদ বিষয়ক দায়িত্বে থাকা মিফতাহ উদ্দিনও বরখাস্ত হয়েছেন।

অন্য বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা হলেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবীবুল্লাহ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাব্বির, কাজী মো. রেজাউল করিম এবং মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। ব্যাংকের প্রধান অর্থ পাচার প্রতিরোধ কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) তাহের আহমেদ চৌধুরী এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল মো. নজরুল ইসলামও বরখাস্ত হয়েছেন।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। এর মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। সরকার পতনের পর এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে অর্থ সরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদিনেই ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়, তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা তা আটকে দেন। অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেছিল গোল্ডেন স্টার ও টপ টেন ট্রেডিং হাউজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ব্যাংকিং সেক্টরের অস্থিরতা কমাতে এবং অর্থনীতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।