Dhaka ১১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা

  • Update Time : ০২:৩৬:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 99

গোলাম নাফিজ হত্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

বাংলাদেশে সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সময় নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র গোলাম নাফিজের মৃত্যুর ঘটনায় গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। নাফিজের বাবা মো. গোলাম রহমান গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা

গোলাম রহমানের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অভিযুক্ত চার পুলিশ কর্মকর্তা হলেন:

  • চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (সাবেক আইজিপি)
  • হারুন-অর-রশীদ (সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান)
  • বিপ্লব কুমার সরকার (সাবেক যুগ্ম কমিশনার)
  • মোহাম্মদ মহসীন (তেজগাঁও থানার সাবেক ওসি)

অভিযোগে আরো অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ সদস্য, স্থানীয় কমিশনার, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪০-৫০ নেতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ

গোলাম নাফিজ ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকাল ১১টায় সরকার পতনের আন্দোলনে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হয়। পরবর্তী সময়ে বিকেল ৩টার দিকে তার মার সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর নাফিজের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গোলাম রহমান তার ছেলেকে খুঁজতে বের হলে, ফার্মগেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলি চালাতে দেখে। নানা হাসপাতালে ছেলের খোঁজ করতে থাকেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পত্রিকার অনলাইন প্রতিবেদনে একটি রিকশায় গুলিবিদ্ধ নাফিজের নিথর দেহ পড়ে থাকার ছবি দেখতে পান। পরে রাত ৩টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন।

অভিযোগের ভিত্তি

গোলাম রহমান অভিযোগে উল্লেখ করেছেন যে, নাফিজকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর একজন রিকশাচালক হাসপাতালে নিতে গেলে পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা বাধা দেয়। অভিযোগে বলা হয়েছে যে, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে নাফিজকে হত্যা করে এবং এ হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যার অংশ হিসেবে ঘটানো হয়েছে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগে বলা হয়েছে, তার নির্দেশ ও অন্যান্য আসামিদের অনুমোদনে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। গোলাম রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন এক সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রমাণ করে আমার ছেলে নাফিজের হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যার অংশ।”

তদন্তের অগ্রগতি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক মো. আতাউর রহমান জানিয়েছেন, অভিযোগটি কমপ্লেন্ট রেজিস্ট্রিভুক্ত করা হয়েছে এবং তদন্ত সংস্থা ১১টি অভিযোগ রেজিস্ট্রিভুক্ত করেছে। ১০টি অভিযোগ সরকার পতনের আন্দোলনকেন্দ্রিক, এবং একটি ২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি নিয়ে। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের কাজ চলমান থাকায় আপাতত অভিযোগ সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পুনর্গঠন সম্পন্ন হলে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু হবে।

সাক্ষীদের তালিকা

গোলাম রহমান অভিযোগে নিহত গোলাম নাফিজের বন্ধু, মামা ও পাঁচজনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে উত্তেজনা ও উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এবং এ ধরনের একটি গুরুতর অভিযোগের যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা

Update Time : ০২:৩৬:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গোলাম নাফিজ হত্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

বাংলাদেশে সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সময় নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র গোলাম নাফিজের মৃত্যুর ঘটনায় গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। নাফিজের বাবা মো. গোলাম রহমান গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা

গোলাম রহমানের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অভিযুক্ত চার পুলিশ কর্মকর্তা হলেন:

  • চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (সাবেক আইজিপি)
  • হারুন-অর-রশীদ (সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান)
  • বিপ্লব কুমার সরকার (সাবেক যুগ্ম কমিশনার)
  • মোহাম্মদ মহসীন (তেজগাঁও থানার সাবেক ওসি)

অভিযোগে আরো অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশ সদস্য, স্থানীয় কমিশনার, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪০-৫০ নেতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ

গোলাম নাফিজ ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সকাল ১১টায় সরকার পতনের আন্দোলনে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হয়। পরবর্তী সময়ে বিকেল ৩টার দিকে তার মার সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর নাফিজের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গোলাম রহমান তার ছেলেকে খুঁজতে বের হলে, ফার্মগেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলি চালাতে দেখে। নানা হাসপাতালে ছেলের খোঁজ করতে থাকেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পত্রিকার অনলাইন প্রতিবেদনে একটি রিকশায় গুলিবিদ্ধ নাফিজের নিথর দেহ পড়ে থাকার ছবি দেখতে পান। পরে রাত ৩টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন।

অভিযোগের ভিত্তি

গোলাম রহমান অভিযোগে উল্লেখ করেছেন যে, নাফিজকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর একজন রিকশাচালক হাসপাতালে নিতে গেলে পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা বাধা দেয়। অভিযোগে বলা হয়েছে যে, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে নাফিজকে হত্যা করে এবং এ হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যার অংশ হিসেবে ঘটানো হয়েছে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগে বলা হয়েছে, তার নির্দেশ ও অন্যান্য আসামিদের অনুমোদনে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। গোলাম রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন এক সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রমাণ করে আমার ছেলে নাফিজের হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যার অংশ।”

তদন্তের অগ্রগতি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক মো. আতাউর রহমান জানিয়েছেন, অভিযোগটি কমপ্লেন্ট রেজিস্ট্রিভুক্ত করা হয়েছে এবং তদন্ত সংস্থা ১১টি অভিযোগ রেজিস্ট্রিভুক্ত করেছে। ১০টি অভিযোগ সরকার পতনের আন্দোলনকেন্দ্রিক, এবং একটি ২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি নিয়ে। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের কাজ চলমান থাকায় আপাতত অভিযোগ সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পুনর্গঠন সম্পন্ন হলে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু হবে।

সাক্ষীদের তালিকা

গোলাম রহমান অভিযোগে নিহত গোলাম নাফিজের বন্ধু, মামা ও পাঁচজনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে উত্তেজনা ও উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এবং এ ধরনের একটি গুরুতর অভিযোগের যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।