Dhaka ১১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রবল বর্ষণে আফগানিস্তানে ৩৫ জনের প্রাণহানি: প্রকৃতির রোষ থামছে না

  • Update Time : ০১:১৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
  • / 66

প্রবল বর্ষণে আফগানিস্তানে ৩৫ জনের প্রাণহানি: প্রকৃতির রোষ থামছে না

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে প্রবল বর্ষণে অন্তত ৩৫ জন নিহত এবং ২৩০ জন আহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় জালালাবাদ এবং নানগারহারের কয়েকটি জেলায় এই বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটে। দেশটির তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান কুরাইশি বদলুন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বর্ষণের কারণে গাছ, দেয়াল ও বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের নানগারহার আঞ্চলিক হাসপাতাল ও ফাতিমা-তুল-জাহরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর এএফপির।

প্রকৃতির রোষ এবং প্রাণহানি

প্রবল ঝড়-বৃষ্টির কারণে গাছ, দেয়াল এবং মানুষের বাড়ি-ঘরের ছাদ ধসে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বদলুন বলেন, “আমরা আহতদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করছি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

হাসপাতালের পরিস্থিতি

নানগারহার আঞ্চলিক হাসপাতাল এবং ফাতিমা-তুল-জাহরা হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সাদা ও নীল ইউনিফর্ম পরা স্বাস্থ্যকর্মীরা আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালে আহতদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং চিকিৎসকরা অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বিধ্বস্ত অবকাঠামো

ঝড়-বৃষ্টির কারণে নানগারহার অঞ্চলে ৪০০টিরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জালালাবাদের প্রাদেশিক রাজধানীতে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ ছিল এবং অনেক বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। নানগারহার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ পরিষেবা পুনঃস্থাপনের জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেক নাগরিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে হাসপাতালে রক্ত দান করেছেন।

তালেবান সরকারের প্রতিক্রিয়া

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এই দুর্ঘটনার পরে এক শোক বার্তা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি।” মুজাহিদ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “ইসলামি আমিরাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে আশ্রয়, খাদ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করবে।”

পূর্ববর্তী বিপর্যয়

এটি প্রথমবার নয় যখন আফগানিস্তান এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। গত মে মাসে আকস্মিক বন্যায় শত শত লোক মারা যান এবং দেশের কৃষিজমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই ধরনের বিপর্যয়জনিত ঘটনার পর, যেখানে জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বেঁচে থাকার জন্য কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল, দেশের অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়।

আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং পুনর্বাসন

আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে আফগানিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা জরুরি খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে। আফগানিস্তানে এই ধরনের বিপর্যয়জনিত ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সমাপ্তি

প্রবল বর্ষণে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৩৫ জনের প্রাণহানি এবং ২৩০ জন আহতের ঘটনা দেশের মানবিক পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা আশা করি, দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা করা যাবে এবং দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা যাবে।

ট্যাগ :

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

প্রবল বর্ষণে আফগানিস্তানে ৩৫ জনের প্রাণহানি: প্রকৃতির রোষ থামছে না

Update Time : ০১:১৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে প্রবল বর্ষণে অন্তত ৩৫ জন নিহত এবং ২৩০ জন আহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় জালালাবাদ এবং নানগারহারের কয়েকটি জেলায় এই বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটে। দেশটির তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান কুরাইশি বদলুন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বর্ষণের কারণে গাছ, দেয়াল ও বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের নানগারহার আঞ্চলিক হাসপাতাল ও ফাতিমা-তুল-জাহরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর এএফপির।

প্রকৃতির রোষ এবং প্রাণহানি

প্রবল ঝড়-বৃষ্টির কারণে গাছ, দেয়াল এবং মানুষের বাড়ি-ঘরের ছাদ ধসে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বদলুন বলেন, “আমরা আহতদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করছি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

হাসপাতালের পরিস্থিতি

নানগারহার আঞ্চলিক হাসপাতাল এবং ফাতিমা-তুল-জাহরা হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সাদা ও নীল ইউনিফর্ম পরা স্বাস্থ্যকর্মীরা আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালে আহতদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং চিকিৎসকরা অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বিধ্বস্ত অবকাঠামো

ঝড়-বৃষ্টির কারণে নানগারহার অঞ্চলে ৪০০টিরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জালালাবাদের প্রাদেশিক রাজধানীতে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ ছিল এবং অনেক বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। নানগারহার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ পরিষেবা পুনঃস্থাপনের জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেক নাগরিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে হাসপাতালে রক্ত দান করেছেন।

তালেবান সরকারের প্রতিক্রিয়া

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এই দুর্ঘটনার পরে এক শোক বার্তা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি।” মুজাহিদ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “ইসলামি আমিরাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে আশ্রয়, খাদ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করবে।”

পূর্ববর্তী বিপর্যয়

এটি প্রথমবার নয় যখন আফগানিস্তান এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। গত মে মাসে আকস্মিক বন্যায় শত শত লোক মারা যান এবং দেশের কৃষিজমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই ধরনের বিপর্যয়জনিত ঘটনার পর, যেখানে জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বেঁচে থাকার জন্য কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল, দেশের অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়।

আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং পুনর্বাসন

আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে আফগানিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা জরুরি খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে। আফগানিস্তানে এই ধরনের বিপর্যয়জনিত ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সমাপ্তি

প্রবল বর্ষণে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৩৫ জনের প্রাণহানি এবং ২৩০ জন আহতের ঘটনা দেশের মানবিক পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা আশা করি, দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা করা যাবে এবং দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা যাবে।