Dhaka ১১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পদ্মা সেতুর ম্যুরাল নির্মাণে ১১৭ কোটি টাকা

  • Update Time : ০৪:১২:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 121

পদ্মা সেতুর ম্যুরাল নির্মাণে ১১৭ কোটি টাকা

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী কমপ্লেক্সের ব্যয়: ১১৭ কোটি টাকা কি সঠিক?

বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলেও, সেতুর দুই প্রান্তে নির্মিত ম্যুরাল ও উদ্বোধনী কমপ্লেক্সের ব্যয় নিয়ে চলছে বিতর্ক। নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ উঠেছে যে, এই ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেশি।

ম্যুরাল ও উদ্বোধনী কমপ্লেক্স নির্মাণে বিপুল ব্যয়

পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যুরাল নির্মাণের জন্য ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে। ম্যুরাল নির্মাতা ও স্থপতিরা এই ব্যয়কে অস্বাভাবিক মনে করছেন। তাদের মতে, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিলে ব্যয় অনেক কম হতে পারত। তথাপি, এই কাজের জন্য কোনো দরপত্র ডাকা হয়নি এবং বিতর্কিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মাধ্যমে এই প্রকল্প সম্পন্ন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয়

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও প্রচুর খরচের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অনুষ্ঠানটির জন্য ৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইভেন্ট টাচ ইন্টারন্যাশনাল ছিল এবং তারা অনুষ্ঠানস্থলের প্রস্তুতি, সাজসজ্জা ও অন্যান্য কাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এই ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কারণ অনুষ্ঠানের খরচের পরিমাণ এমনিতেই অনেক বেশি ছিল।

দুর্নীতির অভিযোগ

বিগত সরকারের আমলে বড় বড় নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে বিতর্কিত ঠিকাদার নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ‘বালিশ-কাণ্ড’ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাদধসের ঘটনায় আলোচিত ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পদ্মা সেতুর ম্যুরাল নির্মাণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে, যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

নকশা ও বাস্তবতা

পদ্মা সেতুর ম্যুরাল এবং উদ্বোধনী কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য নকশাকারী প্রতিষ্ঠান ও শিল্পীরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের ব্যয় যথেষ্ট বেশি হয়েছে। নকশা ও নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থপতি ফজলে করিম শিশির জানান, সময় স্বল্পতার কারণে কাজের পরিমাণ কমানো হয়েছে, তবে ব্যয় যে পরিমাণ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মতামত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে না-এটা সকলেরই জানা ছিল। তার মতে, ১১৭ কোটি টাকার ব্যয় বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের রেকর্ড হতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ধরনের ব্যয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

উপসংহার

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী কমপ্লেক্সের ম্যুরাল নির্মাণে এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিশ্চিত করতে হলে, এর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও প্রকাশযোগ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জনসাধারণের করের টাকায় পরিচালিত প্রকল্পের ব্যয় সঠিকভাবে নির্ধারণ করা, সরকারের দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

পদ্মা সেতুর ম্যুরাল নির্মাণে ১১৭ কোটি টাকা

Update Time : ০৪:১২:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী কমপ্লেক্সের ব্যয়: ১১৭ কোটি টাকা কি সঠিক?

বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলেও, সেতুর দুই প্রান্তে নির্মিত ম্যুরাল ও উদ্বোধনী কমপ্লেক্সের ব্যয় নিয়ে চলছে বিতর্ক। নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ উঠেছে যে, এই ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেশি।

ম্যুরাল ও উদ্বোধনী কমপ্লেক্স নির্মাণে বিপুল ব্যয়

পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যুরাল নির্মাণের জন্য ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে। ম্যুরাল নির্মাতা ও স্থপতিরা এই ব্যয়কে অস্বাভাবিক মনে করছেন। তাদের মতে, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিলে ব্যয় অনেক কম হতে পারত। তথাপি, এই কাজের জন্য কোনো দরপত্র ডাকা হয়নি এবং বিতর্কিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মাধ্যমে এই প্রকল্প সম্পন্ন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয়

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও প্রচুর খরচের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অনুষ্ঠানটির জন্য ৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইভেন্ট টাচ ইন্টারন্যাশনাল ছিল এবং তারা অনুষ্ঠানস্থলের প্রস্তুতি, সাজসজ্জা ও অন্যান্য কাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এই ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কারণ অনুষ্ঠানের খরচের পরিমাণ এমনিতেই অনেক বেশি ছিল।

দুর্নীতির অভিযোগ

বিগত সরকারের আমলে বড় বড় নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে বিতর্কিত ঠিকাদার নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ‘বালিশ-কাণ্ড’ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাদধসের ঘটনায় আলোচিত ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পদ্মা সেতুর ম্যুরাল নির্মাণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে, যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

নকশা ও বাস্তবতা

পদ্মা সেতুর ম্যুরাল এবং উদ্বোধনী কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য নকশাকারী প্রতিষ্ঠান ও শিল্পীরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের ব্যয় যথেষ্ট বেশি হয়েছে। নকশা ও নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থপতি ফজলে করিম শিশির জানান, সময় স্বল্পতার কারণে কাজের পরিমাণ কমানো হয়েছে, তবে ব্যয় যে পরিমাণ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মতামত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে না-এটা সকলেরই জানা ছিল। তার মতে, ১১৭ কোটি টাকার ব্যয় বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের রেকর্ড হতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ধরনের ব্যয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

উপসংহার

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী কমপ্লেক্সের ম্যুরাল নির্মাণে এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিশ্চিত করতে হলে, এর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও প্রকাশযোগ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জনসাধারণের করের টাকায় পরিচালিত প্রকল্পের ব্যয় সঠিকভাবে নির্ধারণ করা, সরকারের দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।