Dhaka ১২:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রেমিট্যান্সে ধস: ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি হ্রাস, ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব

  • Update Time : ০২:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪
  • / 24

জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

রেমিট্যান্সে ধস: জুলাই মাসে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি হ্রাস

গত জুন মাসে ঈদুল আজহা উপলক্ষে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এক মাস না যেতেই চিত্র পাল্টে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

প্রতিমাসের প্রথম কার্যদিবসে আগের মাসের রেমিট্যান্সের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা প্রকাশ করেনি। বিকেলে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের কাছে রেমিট্যান্সের তথ্য জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিবেদন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। পরে বিকেল ৫টার দিকে প্রতিবেদনের অংশবিশেষ হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করা হয়।

রেমিট্যান্স হ্রাসের কারণসমূহ

মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে, যা আগের বছরের জুলাই মাসে ছিল ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে রেমিট্যান্স কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।

ডলারের দাম বৃদ্ধি ও এর প্রভাব

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দাম ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। এখন এটা বাড়তে শুরু করেছে।

রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার প্রভাব

রেমিট্যান্স কমে গেলে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভের চাপ কমাতে বেশি দামে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির একজন প্রভাবশালী ডেপুটি গভর্নর সম্প্রতি বেশি রেমিট্যান্স আহরণকারী ২০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার রেট ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা অফার করেছে।

খোলাবাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি

রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার খবরে খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে ১২৫ টাকায় উঠেছে। মানি চেঞ্জার গুলোর সংগঠন ‘মানি চেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ থেকে বলা হয় খুচরা প্রতি ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৯ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে না। তবে মানি চেঞ্জারদের এ নির্দেশনা মানেনি কেউ। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ (বৃহস্পতিবার) খোলাবাজারে এক ডলার কিনতে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ১২৫ টাকা ৫০ পয়সা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও রেমিট্যান্স হ্রাস

গত ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষ ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ১৫০ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। তবে কয়েকটি গণমাধ্যমে মৃত্যুর সংখ্যা দুই শতাধিক বলা হচ্ছে।

ইন্টারনেট বন্ধ ও এর প্রভাব

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করা হয়। ওই দিন ইন্টারনেট সেবা দুপুরে সীমিত এবং পরে রাতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ রেখে ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড সংযোগ চালু হলেও মোবাইল ডেটার ইন্টারনেট ২৮ জুলাই দুপুর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার বিকেল ৩টার পর মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমগুলোতে থ্রি-জি ও ফোর-জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু হয়।

এমতাবস্থায় রেমিট্যান্স হ্রাসের বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন যাতে রেমিট্যান্স পুনরায় বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

ট্যাগ :

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

রেমিট্যান্সে ধস: ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি হ্রাস, ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব

Update Time : ০২:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪
জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

রেমিট্যান্সে ধস: জুলাই মাসে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি হ্রাস

গত জুন মাসে ঈদুল আজহা উপলক্ষে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এক মাস না যেতেই চিত্র পাল্টে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

প্রতিমাসের প্রথম কার্যদিবসে আগের মাসের রেমিট্যান্সের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা প্রকাশ করেনি। বিকেলে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের কাছে রেমিট্যান্সের তথ্য জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিবেদন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। পরে বিকেল ৫টার দিকে প্রতিবেদনের অংশবিশেষ হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করা হয়।

রেমিট্যান্স হ্রাসের কারণসমূহ

মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে, যা আগের বছরের জুলাই মাসে ছিল ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে রেমিট্যান্স কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।

ডলারের দাম বৃদ্ধি ও এর প্রভাব

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দাম ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। এখন এটা বাড়তে শুরু করেছে।

রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার প্রভাব

রেমিট্যান্স কমে গেলে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভের চাপ কমাতে বেশি দামে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির একজন প্রভাবশালী ডেপুটি গভর্নর সম্প্রতি বেশি রেমিট্যান্স আহরণকারী ২০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার রেট ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা অফার করেছে।

খোলাবাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি

রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার খবরে খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে ১২৫ টাকায় উঠেছে। মানি চেঞ্জার গুলোর সংগঠন ‘মানি চেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ থেকে বলা হয় খুচরা প্রতি ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৯ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে না। তবে মানি চেঞ্জারদের এ নির্দেশনা মানেনি কেউ। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ (বৃহস্পতিবার) খোলাবাজারে এক ডলার কিনতে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ১২৫ টাকা ৫০ পয়সা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও রেমিট্যান্স হ্রাস

গত ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষ ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ১৫০ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। তবে কয়েকটি গণমাধ্যমে মৃত্যুর সংখ্যা দুই শতাধিক বলা হচ্ছে।

ইন্টারনেট বন্ধ ও এর প্রভাব

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করা হয়। ওই দিন ইন্টারনেট সেবা দুপুরে সীমিত এবং পরে রাতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ রেখে ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড সংযোগ চালু হলেও মোবাইল ডেটার ইন্টারনেট ২৮ জুলাই দুপুর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার বিকেল ৩টার পর মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমগুলোতে থ্রি-জি ও ফোর-জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু হয়।

এমতাবস্থায় রেমিট্যান্স হ্রাসের বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন যাতে রেমিট্যান্স পুনরায় বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।